বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির জন্যে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি ভাবধারার মুসলিম লেখকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে নাস্তিকবাদী ও ব্রাহ্মণবাদী ভাবাদর্শের রচনা, গল্প ও কবিতা সংযোজন করা হয়েছে উল্লেখ করে এগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। বুধবার দুপুরে রাজধানীর লালবাগে দলটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির জন্যে বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড প্রণীত পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি ভাবধারার মুসলিম লেখকদের প্রবন্ধ ও গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে তার বদলে নাস্তিকবাদী, ব্রাহ্মণবাদী, বিধর্মীয় ভাবাদর্শের রচনা, গল্প ও কবিতা সংযোজন করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আগে পড়ানো হতো ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবীর (সা) সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে ইসলামের প্রথম খলিফা ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামের সংক্ষিপ্ত জীবনী। চতুর্থ শ্রেণিতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা)-এর জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির অধীনে প্রণীত পাঠ্য বই থেকে মহানবীর (সা) এবং ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা) জীবনী, কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতা, ‘শহীদ তিতুমীর’ নামক একটি জীবনীর বদলে সংযুক্ত করা হয়েছে হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা পবিত্র কোরআন বিরোধী বলে পরিচিত। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটণা সম্বলিত ড. শহীদউল্লাহর ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি লেখা, কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দেবী দূর্গার প্রশংসা সম্বলিত কবিতা ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ এবং লাল গরুটা নামক ছোট গল্প, যা গরুকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে। একই শ্রেণিতে পাঠ্য ’নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক একটি ভ্রমণ কাহিনীর বদলে ‘রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী’ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বই থেকে ’মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর (সা) জীবন চরিত বাদ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাঠা বলী দেওয়ার নিয়ম-কানুন সম্বলিত ‘লালু’ নামক একটি গল্প। অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘বাবরের মহত্ব’ ও বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সংযোজন করা হয়েছে ‘রামায়ণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী’। নবম-দশম শ্রেণির জন্যে লিখিত বই থেকে কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’, কবি আলাওলের ‘হামদ’ ও আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ ‘জীবন বিনিময়’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই শ্রেণির বইয়ে দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা সম্বলিত মঙ্গল কাব্য ‘আমার সন্তান’, ‘সাকোটা দুলছে’ ও রাধা-কৃষ্ণের লীলা কীর্তন ‘সুখের লাগিয়া’ প্রভৃতি কবিতা সংযোজন করা হয়েছে।‘সাকোটা দুলছে’ কবিতাটিতে ৪৭-এর ভারত বিভক্তিকে হেয় করা হয়েছে। তাছাড়া ভারতের পর্যটন স্পট পালামৌ-এর ভ্রমণ কাহিনী এবং বাউলদের যৌনাচার সম্বলিত ‘সময় গেলে সাধন হবেনা’ নামক বইটি নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য-পুস্তক হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে। উপরন্তু, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে যৌন শিক্ষার বই ‘নিজেকে জানুন’।
নেজামী বলেন, বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আমরা মনে করি, এই আন্দোলন সময়োপযোগী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। কেননা প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে জাতীয় আদর্শিক চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতির প্রতিফলন ঘটেনি। বরং ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা বিবর্জিত সেক্যুলার ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা সৃষ্টির পাঁয়তারা প্রকট করে তোলার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে ধর্মীয় পটভূমিকে স্মরণে রেখে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সিলেবাস প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। আগামী শিক্ষা বর্ষের জন্যে প্রকাশিতব্য পাঠ্যপুস্তকে ইসলামি ভাবধারার মুসলিম লেখকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প-কবিতা সংযোজনের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সভা-সমাবেশ, মিছিল, স্মারকলিপি পেশ ও গণসংযোগ প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে ইসলামী ঐক্যজোট দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবে। জোর করে বিপরীতমুখী শিক্ষা নীতি ও আইন চাপিয়ে দেওয়া হলে, তা টিকবে না।